কক্সবাজার বিমান বন্দরে যাত্রীদের নানান ভাবে হয়রানী করা হচ্ছে, বিশেষ করে প্রবাসী যাত্রীদের আসা যাওয়ার সময় বিমান বন্দরে কর্তব্যরত আনসার এবং বিমান কর্মচারীরা তাদের কাছ থেকে ব্যাগে মালামাল বেশি হয়েছে বা স্বজন বেশি আসছে অথবা তাদের ব্যাগ গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে বকশিষের কথা বলে টাকার জন্য রীতিমত সম্মানহানী করছে। তাদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দিলে যাত্রীদের ব্যাগ নিয়ে টানা হেচড়া সহ স্বজনদের সামনে কটুক্তি মুলক কথা বার্তা বলে হেনস্তা করছে। এতে বাধ্য হয়ে বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে যাত্রীদের। এই অবস্থা পরিবর্তন সহ অনিয়ম বন্ধের দাবী জানিয়েছে সচেতন মহল, এতে কক্সবাজারের সূনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে মনে করেন তারা। এদিকে কতৃপক্ষ বলছে বিষয়টি নজরে আসার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
১৯ মে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১ টায় কক্সবাজার বিমান বন্ধরে গিয়ে দেখা যায় প্রধান গাড়ী থামিয়ে কয়েক জন আনসার সদস্য যাত্রীর সাথে প্রয়োজনের বেশি স্বজন ভেতরে প্রবেশ করতে বাধা দিচ্ছে কিছুক্ষন দাড়িয়ে দেখা গেছে ২ টি সিএনজি ফেরত দিলেও আরো ২/৩ টি সিএনজি ভেতরে প্রবেশ করতে দিয়েছে, দেখা গেছে সিএনজি থেকে নেমে ১ জন আনসার সদস্য আজিজ কে একটু দূরে নিয়ে গিয়ে হাত মেলাচ্ছে এর পরেই সিএনজি গুলো ঢুকার অনুমতি পেল। এর পরে ভেতরে গিয়ে যাত্রী প্রবেশের পথে অপক্ষেমান উখিয়া মরিচ্যা এলাকার বাসিন্দা আবদুল্লাহ বলেন আমি সৌদি আরব থেকে এসেছি ২ মাস আগে এখন আমার মামা দুবাই যাচ্ছে সে জন্য উনাকে এগিয়ে দিতে এসেছি, সেখানে বেশ কয়েক জন মহিলা সহ অপেক্ষা করতে দেখে জানতে চাইলে বলেন কিছুক্ষন আগে সামনে দাড়ানো আবছার ও হুমায়ন ২ জন আনসার সদস্যকে ২০০ টাকা করে দিয়েছি তারা খুব করে টাকা চাইছে সে জন্য, পরে তারা লাগেজ ভেতরে নিয়ে গেছে এখন বলছে লাগেজে মালামাল বেশি জানি না এখন আরো কত টাকা দিতে হয়। তিনি বলেন আমি যখন এসেছিলাম তখন আমি না বললেও আমার মালামাল গুলো গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে তারা গাড়ীর দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে, পরে আমি ২০০ টাকা দিতে চাইলে তারা আমাকে ফকির বা আরো কি জানি বলতে শুরু করে আমি খুব অপমানিত হয়ে ৫০০ টাকা দিয়েছিলাম। এটা শুধু এখন না আগেও এধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলাম। পরে সেই প্রবাসী ঢুকার আগ মূহুর্তে আসে বিমানের এক কর্মচারী তার গায়ের গেঞ্জি দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে বিমানের কর্মচারী সেও টাকা দাবী করছে এবং ঢুকার আগে গেইটে থাকা আনসার রাজীবকে টাকা দিতে হয়েছে। ঐ দিন ১২ টার কিছু পরে বিমান থেকে নেমে যাত্রীদের ব্যাগ নিয়ে গাড়ীতে উঠিয়ে দিয়ে বিকাশ ও রতন বেশ কয়েক জন থেকে টাকা আদায় করতে দেখা গেছে এর মধ্যে কাতার থেকে আসা রামুর প্রবাসী শাহাবুদ্দিনের আত্বাীয় ইলিয়াছের সাথে টাকার দেনদরবার নিয়ে ঝগড়া বাধে। এসময় আরো কয়েকটি বিশৃংখল পরিস্থিতি দেখা গেছে যা কোন ভাবেই কাম্য নয়।
এসময় আলাপকালে এক টমটম চালক বলেন এদের নাম দিয়েছে শিকারী তারা সব সময় শিকার ধরার জন্য বসে থাকে এবং বাছাই করে একেক জন একেক টি শিকার ধরবে। বিশেষ করে বিদেশ থেকে যারা আসে বা যেতে চাইছে তাদের নানান ভাবে ফন্দি ফিকির করে টাকা আদায় করাই হচ্ছে এখানকার কর্মচারীদের কাজ। তারা অনেক সময় প্রবাসীদের কাছ থেকে রিয়াল বা ডলার চেয়েও থাকে অনেকে আবার সেটা দিয়ে ও ফেলে। তারা মানুষ বুঝে শিকার ধরে।
পর দিন ২০ মে আবার বিমান বন্ধরে গিয়ে দেখে গেছে বেশির ভাগ আনচার সদস্য আগের কাজের ব্যস্ত সবাই কোন মতে প্রবাসীদের জিম্মি করে টাকা কামায়ের চিন্তায় ব্যস্ত। এসময় আলাপকালে পিএমখালী ইউনিয়নের প্রবাসী নেজাম উদ্দিন বলেন আমি ৩ মাসের ছুটিতে এসেছিলাম এখন যাওয়ার পালা, ৩ মাস আগে যখন আমি কানেকটিং ফ্লাইটে কক্সবাজার বিমান বন্দরে আসি তখন আমার ৩টি ল্যাগেজ নিয়ে আমাকে ১০০০ টাকা দিতে হয়েছিল। প্রথমে ২ জন আনসার সদস্য আমার একটি ল্যাগেজ নিয়ে আমাকে খুব সম্মান করে গেইটের বাইরে এনে গাড়ী পর্যন্ত তুলে দিয়েছে পরের ল্যাগেজগুলো আরো ২ জনে আনলো আমি কিন্তু তাদের বলি নাই যে আমার ল্যাগেজ গুলো আনার জন যেহেতু তারা এনেছে ভাবলাম ২/৩ শত টাকা দিব কিন্তু তারা নাছোড় বান্দা আমাকে রীতিমত বাজে কথা বলে আমার পরিবারের লোকজনের সামনে আমাকে সম্মান হানী করেছে তাই বাধ্য হয়ে ১ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। তার দাবী আমাদের সব প্রবাসী বন্ধু বান্ধব এই সব শিকারিদের খপ্পরে পড়েছে তারা মূলত প্রবাসীদের টার্গেট করে সেবা দেওয়ার নামে টাকা আদায় করার নামে এ কাজ করে।
এ সময় আরেক যাত্রী হ্নীলার সেলিম বলেন আমরাও একই সমস্যায় পড়েছি এখানে কর্তব্যরত কর্মচারীরা নানান ভাবে মানুষ জনকে হয়রানী করে তার দাবী শুধু আনসাররা নয় বিমানের কর্মচারীরাও বকশিসের নামে খুব হেনস্তা করে। যেটা কোন ভাবেই কাম্য নয়। এতে আমাদের জেলার শুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। এদিকে জানা গেছে বিমানবন্ধরের ভেতর থেকে যাত্রী নিতে আসা টমটম বা সিএনজিগুলো থেকেও টাকা আদায় করছে এখানকার কর্মচারীরা।
এব্যাপারে কক্সবাজার বিমান বন্ধরের ম্যনেজার সাধন কুমার মহন্ত বলেন বিষয়ে টি কয়েক দিন আগে আমার নজরে এসেছে, সাথে সাথেই আমি সবাইকে কড়া ভাবে সতর্ক করে দিয়েছি। আর বিমানের কর্মচারীরা আমার আয়ত্বে না তবুও তাদেরকেও এবিষয়ে বারণ করা হয়েছে। বিমানবন্দরে এসে যাত্রীরা হয়রানী হবে এটা কোন ভাবেই কাম্য না। সামনে এ বিষয়ে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পাঠকের মতামত: